ব দ্বীপ
•বদ্বীপ•
নদীবাহিত ক্ষয়জাত পদার্থ গুলি (যেমন পলি বালি নুড়ি কাদা প্রভৃতি) নদীর বার্ধক্য প্রবাহ অর্থাৎ মোহনা নিকট এসে নদীর গতিবেগ এবং খরস্রোত কম হয়ে যাওয়ার ফলে মোহনার নিকট সঞ্চিত হয়ে যে উঁচু ভূমি ভাগের সৃষ্টি হয় যা মাত্রাহীন বয়ের মত আকৃতির হয় তাকে ব দ্বীপ বলে।
{One notable definition of a delta comes from Gilbert, a renowned geologist. Grove Karl Gilbert defined a delta as "a landform composed of sediment that accumulates where a river flows into a lake or ocean, creating a fan-shaped pattern of land."}
•উৎপত্তি:
সুদীর্ঘ উচ্চ ও মধ্য গতি থেকে নদী বিপুল পরিমাণে পলি,বলি,কাদা বয়ে আনে।নিম্নগতি ভূমিধাল কমে যাওয়ায় মোহনাতে নদীর বেগ প্রায় থাকে না ফলে সমুদ্রে নদী বাহিত পদার্থ গুলি জমা হতে থাকে। লবণাক্ত জলের সংস্পর্শে এসে সেগুলি সহজে জোট বদ্ধ হয়ে নতুন ভূভাগ বা দ্বীপ জলতলের ওপর জেগে ওঠে যা কিছুটা ত্রিভূজের বা মাত্রাহীন "ব" এর মতো হয় এবং এর শীর্ষ স্থলভাগের দিকে থাকে এরপর নদী ওই ভূভাগে বাধা পেয়ে বহু শাখায় বিভক্ত হয়ে সমুদ্রের দিকে এগিয়ে যায় এবং আরো পলি,বালি ভূভাগটির চারিদিকে জমা করে ক্ষেত্রমানে বড়ো হতে থাকে। অবশেষে দ্বীপটি মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে যুক্ত হয়ে ব দ্বীপ তৈরি হয়।
নদী পলিমাটি বয়ে নিয়ে মূলত তিন ভাবে বদ্বীপ তৈরী করতে পারে; নদী পলিমাটি বয়ে নিয়ে মূলত তিন ভাবে বদ্বীপ তৈরী করতে পারে;
প্রথমত, নদী যদি স্থির কোন জলাধার যেমন, হ্রদ, উপসাগর, সাগর বা মহাসাগরে পতিত হয়,
দ্বিতীয়ত, অপর আরেকটি নদীর সাথে মিলিত হয় এবং দ্বিতীয় নদী যদি প্রথম নদীর সাথে তাল মিলিয়ে পলিমাটি সরাতে না পারে তবে ব দ্বীপ সৃষ্টি হয়ে থাকে।
তৃতীয়ত, ভুমধ্যঅঞ্চল যেখানে নদীর পলি স্থলভাগে ছড়িয়ে পড়ে ব দ্বীপের সৃষ্টি হয়।
••বদ্বীপ সৃষ্টির অনুকূল ভৌগোলিক পরিবেশ••
সব নদীতে বদ্বীপ গঠিত হয় না। কারণ, বদ্বীপ গঠনে কিছু শর্ত আছে।
(১) পলিরাশির আধিক্য: মোহানায় বিপুল পরিমাণ পলি, বালি, কাদার জোগান থাকলে তা সঞ্চিত হতে থাকবে ও বদ্বীপের বিকাশ ঘটবে। এজন্য সুদীর্ঘ গতিপথ, তীব্র ক্ষয়কাজ, বিস্তৃত অববাহিকা, আর্দ্র জলবায়ু, অনেক উপনদী থাকতে হবে।
(২) দীর্ঘ প্রবাহ : মধ্য ও নিম্ন প্রবাহ দীর্ঘ হবে, যাতে নদী মৃদু স্রোতে সমুদ্রে মেশে। অন্যথায় পলি গভীর সমুদ্রে নিক্ষিপ্ত হয়।
(৩) অগভীর সমুদ্র : মোহানায় মহিসোপানের গভীরতা কম হবে যাতে পলিরাশি দ্বারা দ্রুত ভরাট হতে পারে। (৪) শান্ত সমুদ্র: মোহানায় সমুদ্র স্রোেত ও জোয়ারের প্রাবল্য কম হতে হবে যাতে পলিরাশি অপসারিত না হয়।
(৫) অধিকলবণতা ও ঘনত্ব: মোহানায় সমুদ্র জল যত বেশি লবণাক্ত ও ঘন হবে পলি তত দ্রুত থিতিয়ে জমা হতে থাকে।
(৬) স্থল বেষ্টিত সমুদ্র বা হ্রদ: উন্মুক্ত সমুদ্র ও হ্রদের তুলনায় তা স্থলভাগ দ্বারা আবদ্ধ বা সংকীর্ণ হলে বা মোহানায় নদীগর্ভে চর সৃষ্টি হলে স্রোত ও জোয়ারের প্রভাব না থাকায় দ্রুত সহজে বদ্বীপ গড়ে ওঠে। যেমন- উরাল, ভল্লার বদ্বীপ।
(৭) সমুদ্র তলের স্থিরতা: বিশ্ব উন্নায়নের প্রভাবে সমুদ্রের জলতলের বৃদ্ধি না হওয়া দরকার যাতে নবগঠিত নতুন ভূভাগ জলে ডুবে না যায়।
•••ব-দ্বীপের শ্রেণীবিভাগ•••
উৎপত্তি ও গঠন অনুসারে বদ্বীপকে প্রধানত তিনটি ভাগে ভাগ করা যায়:-
A)ধনুকাকৃতি বদ্বীপ।
B)তীক্ষ্ণাগ্র বদ্বীপ।
C)পাখির পা-এর মতো বদ্বীপ।
A. ধনুকাকৃতি বদ্বীপ: প্রধান নদী ও শাখানদীর মিলনস্থলে শাখানদীবাহিত পলিসমূহ সঞ্চিত হয়ে ধনুকের ন্যায় যে বদ্বীপ গড়ে তোলে, তাকে ধনুকাকৃতি বদ্বীপ বলে। লাতিন শব্দ 'Arcus' থেকে ইংরেজি শব্দ 'Arcuate' এসেছে, যার অর্থ ধনুক।
উৎপত্তি:-মোহনাতে নদী একটু বেশি গতিতে পলিরাশিকে সমুদ্রের দিকে বিস্তৃত করে এবং সমুদ্র ও জোয়ার-ভাটা স্রোত সঞ্চিত পলিরাশিকে উপকূলের সমান্তরালে দুদিকে বিস্তৃত করলে ধনুকের মতো নতুন ভুভাগ গড়ে ওঠে, এই বদ্বীপের উৎপত্তিতে নদী ও সামুদ্রিক শক্তি প্রায় সমান ভূমিকা পালন করে।
• বৈশিষ্ট্য: (i) এক্ষেত্রে মূল নদীর দুইপাশের শাখানদীর চেয়ে বেশি শক্তিশালী হয় এবং সঞ্চিত পদার্থ সমুদ্রের দিকে কিছুটা এগিয়ে যায়। (ii) এই বদ্বীপ নুড়ি, কাদা, বালি প্রভৃতি ভারী পদার্থ দ্বারা তৈরি। (iii) এই বদ্বীপ প্রতি বছর সমুদ্রের সম্মুখবর্তী হয়ে ধনুকের মতো বেঁকে থাকে।
• উদাহরণ: নীলনদ, পো, হোয়াংহো, গঙ্গা, ইরাবতী, মহানদী, গোদাবরী নদীর বদ্বীপ।
B. তীক্ষ্ণাগ্র বদ্বীপ: এই বদ্বীপের ক্ষেত্রে প্রধান নদী মোহানা করাতের দাঁতের তীক্ষ্ণ সম্মুখভাগের মতো প্রবেশ করে। তাই এই ধরনের বদ্বীপকে বলে তীক্ষ্ণাগ্র বা কাসপেট বদ্বীপ।
উৎপত্তি:-নদী সরল উপকূলরেখা বিশিষ্ট কোন সমুদ্রে এসে মিলিত হলে নদীবাহিত পলিরাশি সমুদ্র তরঙ্গের প্রবল স্রোতে মোহনার উভয়দিকে উপকূল বরাবর ছড়িয়ে পড়ে। মোহনার দুদিকে ব-দ্বীপের বাহু দুটি ক্ষুদ্র বৃত্তচাপের আকার ধারণ করে এবং ধারালো দাঁতের মতো রেখায় পরিণত হয়ে এই বদ্বীপ সৃষ্টি করে এই বদ্বীপের উৎপত্তিতে নদীর শক্তির তুলনায় সামুদ্রিক শক্তির প্রভাব বেশি থাকে।
• বৈশিষ্ট্য: (i) পুরোদেশীয় দুটি স্পিট দুদিক থেকে বৃদ্ধি পেতে পেতে পরস্পরের সঙ্গে মিলিত হয়ে কাসপেট স্পিট গঠন করে। এই কাসপেট স্পিট ধারাবাহিকভাবে সমুদ্রের দিকে বিস্তৃত হয়ে তীক্ষ্মাগ্র বদ্বীপ গঠন করে। (ii) নদীর মোহানায় সঞ্চিত পদার্থসমূহ প্রবল সমুদ্রতরঙ্গের আঘাতে মাঝখান থেকে দুদিকে ছড়িয়ে পড়ে। ফলে করাতের দাঁতের মতো তীক্ষ্ণ বদ্বীপ সৃষ্টি হয়।
• উদাহরণ : ইতালির টাইবার নদীর বদ্বীপ, ভারতের সুবর্ণরেখা নদীর বদ্বীপ।
C. পাখির পা-এর মতো বদ্বীপ: সমুদ্রতরঙ্গের তুলনায় নদীশক্তির পরিমাণ বেশি হলে পাখির পা-এর মতো বদ্বীপ গঠিত হয়।
উৎপত্তি:-মোহনাতে নদী প্রবল বেগে বিপুল পরিমাণে সূক্ষ্ম পলিকনা এনে সমুদ্রে বহুদূর পর্যন্ত বিভিন্ন শাখায় ভাগ হয়ে দীর্ঘ ও সরু আকারে সঞ্চিত হয়। কারণ দুর্বল সমুদ্র ও জোয়ার ভাটার স্রোত সঞ্চিত পলি রাশিকে অপসারণ করতে পারেনা অবশেষে পাখির পায়ের আঙ্গুলের মত নতুন ভূভাগ জেগে ওঠে।
• বৈশিষ্ট্য: (i) নদীবক্ষে সঞ্চিত পদার্থ প্রধান নদীকে ছোটো ছোটো শাখানদীতে বিভক্ত করে পাখির পায়ের মতো দীর্ঘ ও সংকীর্ণ আকারে সমুদ্রের দিকে অগ্রসর হয়। (ii) সমুদ্রজলের ঘনত্বের তুলনায় নদীর জলের ঘনত্ব কম থাকায় নদী প্রবাহের দুদিকে পলি সঞ্চিত হয়ে ওই বদ্বীপ সৃষ্টি করে। (ii) ভূমির অধিক ঢাল, নদীর বেশি গতিবেগ এই বদ্বীপ গঠনের সহায়ক।
উদাহরণ:- মিসিসিপি,সিন্ধু, কৃষ্ণা।
••••ডেল্টার ছবি•••
ব দ্বীপের ডেল্টা নামকরণ":-খ্রিস্টপূর্ব পঞ্চম শতকে গ্রিক পন্ডিত হেরোডোটাস নীলনদের মোহনায় ত্রিকোণাকার নদী সঞ্চয়জাত ভূমিকে গ্রিক অক্ষর ডেল্টার(∆) সঙ্গে সাদৃশ্য রেখে একে ডেল্টা (∆) নাম দেন।
Comments
Post a Comment