বিজ্ঞান ও কুসংস্কার মাধ্যমিক বাংলা রচনা HS Bengali madhymik rochona

        


         বিজ্ঞান ও কুসংস্কার

written by FIROZ MALLICK 


•ভূমিকা:-সভ্যতার আদিলগ্ন থেকেই মানুষ বিভিন্ন প্রতিকূলতাকে জয় করে দুর্লভের খোঁজ চালিয়েছে।মানুষ এর মাধ্যমেই সভ্যতার ইতিহাসকে গৌরবময় করতে পেরেছে ।আবিষ্কারের এক নেশা তার মধ্যে  প্রতিনিয়ত বয়ে চলেছে ,অজানাকে জানতে তাই প্রতিমুহূর্তে সে নানা প্রতিকূল পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছে।আর এই সংগ্রামী প্রাণে সমৃদ্ধির সঞ্চার ঘটেছে বিজ্ঞানের জয়যাত্রার মাধ্যমে ।

আর ঠিক বিজ্ঞানের বিপরীত অবস্থা হল কুসংস্কার। যা মানুষের চেতনা শক্তির অবনমন ঘটায়,মানুষকে হাজার হাজার বছর পিছিয়ে দেয়। বিজ্ঞানের অগ্রগতির পথের বাধা হয়ে দাঁড়ায় এই কুসংস্কার।


•কুসংস্কারের ধারণা :- কুসংস্কার হলো মানুষের যুক্তি বিচারহীন অন্ধবিশ্বাস যা প্রাচীনকাল থেকেই মানুষের অন্তরে প্রোথিত হয়ে আছে।এমন অন্ধবিশ্বাস মানুষের অজ্ঞতার কারণে কুসংস্কারে পরিণত হয়েছে ।
যেমন :- বিজ্ঞানের যুগেও মানুষ অসুখ সারাতে ওষুধ না খেয়ে ঝাঁড়ফুক করে ,ভুত-প্রেত ,ডাইনি ইত্যাদির ভয়ে মরে ।


•কুসংস্কারের সূচনা বা উৎপত্তি :-এই পৃথিবীতে প্রাণের বিবর্তনের পথ ধরে একসময় মানুষের আবির্ভাব ঘটেছিল।গুহাবাসী মানুষের কাছে প্রাকৃতিক শক্তি ছিল প্রধান অন্তরায়। আদিম মানুষ এই প্রকৃতির রহস্যকে নিজের মতো করে বোঝার চেষ্টা করত।তারা তাদের নিজেদের অভিজ্ঞতালব্ধ ধ্যানধারণা পরবর্তী প্রজন্মের মধ্যে চালিত করত। এইসব প্রাচীন বিশ্বাস মানুষের মনে দৃঢ় ভাবে প্রোথিত হয়েছিল ।কিন্তু বিজ্ঞানের অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে বহু সংস্কার ভ্রান্ত বলে প্রমাণিত হয়। তবে, যেসব জায়গায় বিজ্ঞানের আলো পৌঁছায় নি সেখানে কুসংস্কারের রাজত্ব চলতে থাকলো। আবার, কিছু মানুষ বিজ্ঞান জানা সত্ত্বেও পুরাতন ধ্যান-ধারণা আঁকড়ে ধরে পড়ে রইল মোটকথা হল, বিজ্ঞানের এত অগ্রগতি সত্ত্বেও কুসংস্কারের অবসান ঘটল না।


•কুসংস্কারের প্রকারভেদ :-কুসংস্কার বিভিন্ন ধরনের হতে পারে। যথা, ব্যক্তিগত কুসংস্কার, সামাজিক কুসংস্কার, ধর্মীয় কুসংস্কার প্রভৃতি। ব্যক্তিগত কুসংস্কার সংখ্যায় প্রচুর এবং এগুলি ব্যক্তিকেন্দ্রিক। পরীক্ষার দিনে ডিম বা কলা না খাওয়া, যাত্রা শুরুর সময় জলভরা কলসি দেখলে সুলক্ষণ ইত্যাদি ব্যক্তিগত কুসংস্কারের মধ্যে পড়ে।

সামাজিক কুসংস্কার হল সামাজিক ব্যাধির মতো। ডাইনি সংক্রান্ত ধারণা সামাজিক কুসংস্কারের অন্যতম উদাহরণ। এখনো পর্যন্ত আমাদের দেশে ডাইনি সন্দেহে মানুষকে পুড়িয়ে মারার ঘটনা ঘটে। নারীত্বের অবমাননা করে এমন কিছু কুসংস্কারও আমাদের দেশে প্রচলিত রয়েছে।

ধর্মীয় কুসংস্কার বলতে সেইসব কুসংস্কারকে বোঝায় যেগুলির পিছনে ধর্মীয় কারণ রয়েছে। সব ধর্মেই কমবেশি ধর্মীয় কুসংস্কার প্রচলিত রয়েছে। একদা প্রচলিত সতীদাহ প্রথা, গঙ্গাসাগরে সন্তান বিসর্জন প্রভৃতি ধর্মীয় কুসংস্কারের উদাহরণ।


•বিজ্ঞান ও কুসংস্কার সংঘাত :-
পৃথিবীর সহজ সত্যগুলোকে মানুষ যখন কুসংস্কারের অন্ধকারে ঢেকে ফেলে, নিজের চোখ ও কান কানের চেয়ে অন্যের বলা কথা কে চটকের জোরে সত্যি বলে মানতে থাকে,তখনই তৈরি হয়, যুক্তি আর কুসংস্কারের মধ্যে সংঘাত।বিজ্ঞান এবং কুসংস্কার একে অপরের বিপরীত প্রান্তে
অবস্থিত। বিজ্ঞান যুক্তিকে প্রাধান্য দেয় কিন্তু
কুসংস্কার যুক্তির ধার ধারে না। তাই যেখানে বিজ্ঞান থাকে সেখানে কুসংস্কার থাকতে পারেনা। কিন্তু বাস্তবে দেখা যায়, একই মানুষের মনে বিজ্ঞান এবং কুসংস্কার পরস্পর সহাবস্থান করে। হাসপাতালগামী অ্যাম্বুলেন্সও অনেক সময় রাস্তায় বিড়াল পারাপার করতে দেখলে ব্রেক কষে। আরো আশ্চর্য লাগে যখন দেখি কিছু মানুষ মোবাইল ফোনের মাধ্যমে কুসংস্কার প্রচার করে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সাহায্য নিয়ে একদল অসাধু মানুষ কুসংস্কারকে জিইয়ে রাখতে চায়।

•কুসংস্কার দূরীকরণে বিজ্ঞান:- অন্ধকার দূর করতে যেমন আলোর প্রয়োজন হয়, তেমনি কুসংস্কারকে নির্মূল করতে পারে এক এবং একমাত্র বিজ্ঞান। বিজ্ঞানকে বইয়ের পাতায় বন্দি না রেখে মানুষের মধ্যে বিজ্ঞানচেতনার উন্মেষ ঘটাতে হবে। তবেই কুসংস্কারের গতিরোধ করা সম্ভব হবে। সরকারিভাবে এমন কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে যাতে জনমানসে বৈজ্ঞানিক ধ্যানধারণার প্রসার ঘটে। বিজ্ঞান মঞ্চগুলি এ ব্যাপারে সদর্থক ভূমিকা গ্রহণ করতে পারে। সংবাদপত্র, বেতার, দূরদর্শন এবং ইন্টারনেটের মাধ্যমেও কুসংস্কার-বিরোধী প্রচার চালানো যেতে পারে। তাছাড়া, বিদ্যালয় পাঠ্যসূচিতে এমন পাঠ অন্তর্ভুক্ত করতে হবে যাতে দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম কুসংস্কারমুক্ত হতে পারে।


•কুসংস্কার দূরীকরণে বিজ্ঞানীদের আত্মত্যাগ:- : যুগে যুগে শত শত বিজ্ঞানীরা শ্রম, মেধা ও সাধনার ফলেই বিজ্ঞান আজ এই পর্যায়ে আস্তে পেরেছে। বিজ্ঞানের আজ যে অগ্রগতি আমরা দেখতে পাই তার পিছনে রয়েছে শত শত বিজ্ঞানীদের আত্মত্যাগ। তাদের কঠোর পরিশ্রমে আবিষ্কৃত জিনিস ও সত্যতা গুলি আমাদের জীবনকে সহজ সরল ও উন্নত করে তুলেছে


উপসংহার :- সবশেষে আমরা বলতে পারি যে কুসংস্কার ও অন্ধবিশ্বাসের হাত থেকে মানুষকে মুক্তি দেওয়ার ক্ষমতা বিজ্ঞানের নেই,এই ক্ষমতা আছে কেবল বিজ্ঞান চেতনার মধ্যে। যুক্তি, মুক্ত চিন্তা ও কার্যকারণ সূত্রের মিশেলেই মানুষকে এক স্বচ্ছ পৃথিবীর সন্ধান দিতে পারে।












Comments

Popular posts from this blog

GEOGRAPHY PRACTICAL :- SQUARE DIAGRAM

Scale B.A B.Sc Practical HS Geography practical GEOGRAPHY PRACTICAL GRADUATION :- SCALE উচ্চমাধ্যমিক ভূগোল প্র্যাক্টিক্যাল স্কেল ucchomadhymick practial Scale

H.S exam Geography Suggestion উচ্চমাধ্যমিক ভূগোল 100 টি MCQ প্রশ্ন উত্তর Top 100 M.C.Q 100% common in Exam উচ্চমাধ্যমিক ভূগোল প্রশ্ন-উত্তর