ল্যামার্কের বিবর্তন তত্ত্বের মূল বক্তব্যগুলি উদাহরণসহ ব্যাখ্যা কর
Q)বিবর্তন সম্পর্কিত ল্যামার্কের মতবাদ : ল্যামার্ক 1809 সালে তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ 'ফিলজফি জুলজিক' (Philosophie Zoologique)- * বিবর্তনের বিজ্ঞানভিত্তিক মতবাদ প্রকাশ করেন। তাঁর মতবাদকে ল্যামার্কবাদ বা ল্যামার্কিজম বলে। ল্যামার্কের বিবর্তন তত্ত্বের প্রধান প্রতিপাদ্য গুলি হল—
1)অভ্যন্তরীণ গুরুত্বপূর্ণ শক্তি : জীবনের অভ্যন্তরীণ শক্তির প্রভাবে জীবের সমগ্র দেহ বা অঙ্গপ্রত্যঙ্গের আকার বৃদ্ধি পায়।
2)চাহিদা থেকে নতুন অঙ্গের সৃষ্টি : পরিবেশের পরিবর্তন সকল জীবকে প্রভাবিত করে। এর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নতুন চাহিদার সৃষ্টি হয়। এই চাহিদার ফলে নতুন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ সৃষ্টি হয়।
3)ব্যবহার ও অব্যবহারের সূত্র: ল্যামার্কের মতে, জীবদেহের কোনো অঙ্গ ক্রমাগত ব্যবহৃত হতে থাকলে অঙ্গটি শক্তিশালী, সবল ও সুগঠিত হয়, পক্ষান্তরে জীবদেহের কোনো অঙ্গ দীর্ঘদিন অব্যবহৃত থাকলে সেটি ক্রমশ দুর্বল ও নিষ্ক্রিয় হয় ও অবশেষে অবলুপ্ত হয়ে যায়।
•ব্যবহারের সপক্ষে উদাহরণ:
বহুকাল আগে জিরাফের গলা ছোটো ছিল। কিন্তু কালক্রমে উঁচু গাছের পাতা খাদ্যরূপে গ্রহণের চেষ্টায় গলাটি ক্রমশ লম্বা হয়ে গেছে। এটি ব্যবহারের সপক্ষে প্রমাণ দেয়।
••অব্যবহারের সপক্ষে উদাহরণ: মানুষের পূর্বপুরুষের ল্যাজ ক্রমাগত অব্যবহারের ফলে আজ নিষ্ক্রিয় অঙ্গ কক্সিসে পরিণত হয়েছে। অতীতে উটপাখির ডানা সক্রিয় থাকলেও বংশপরম্পরায় অব্যবহারের ফলে তা নিষ্ক্রিয় অঙ্গে পরিণত হয়েছে। এগুলি অব্যবহারের সপক্ষে যুক্তি দেয়।
4)অর্জিত বৈশিষ্ট্যের বংশানুসরণ: ল্যামার্ক এই সূত্রে বলেন—আপন প্রচেষ্টায় জীবদ্দশায় যেসব বৈশিষ্ট্য জীব অর্জন করে, সেইসব বৈশিষ্ট্য পরবর্তী বংশধরদের মধ্যে, অর্থাৎ এক জনু থেকে অপর জনুতে সঞ্চারিত হয়। এককথায়, জীবের অর্জিত বৈশিষ্ট্যের বংশানুসরণ ঘটে। যেমন—বহুকাল আগে জিরাফের গলা ছোটো ছিল। কিন্তু কালক্রমে উঁচু গাছের পাতা আহরণের চেষ্টায় তা ক্রমশ লম্বা হয়েছে। এই লম্বা গলার বৈশিষ্ট্যটি বংশপরম্পরায় সঞ্ঝারিত হয়ে আজকের লম্বা গলাযুক্ত জিরাফের আবির্ভাব হয়েছে।
5)নতুন প্রজাতির উদ্ভব: অর্জিত গুণাবলি বংশপরম্পরায় বাহিত হওয়ার ফলে অনেকগুলি প্রজন্ম বাদে প্রজাতির মধ্যে পরিবর্তন আসে এবং অবশেষে নতুন প্রজাতির উদ্ভব ঘটে। ল্যামার্কের মতে এটাই হল বিবর্তনের মূল পদ্ধতি।
Comments
Post a Comment