দুর্যোগ ও বিপর্যয় মোকাবিলা
A বিপর্যয়ের পূর্বে গৃহীত ব্যবস্থা
দুর্যোগের প্রভাব রয়েছে এবং প্রভাবের মাত্রা কতটা সে বিষয়ে সঠিক তথ্য সরকারি বেসরকারি উদ্যোগ অর্থাৎ শিক্ষক, গবেষক, সামাজিক 4
[a] দুর্যোগ মূল্যায়ন [Hazard Assessment) : প্রদত্ত অঞ্চলটিতে কোন প্রকার প্রতিষ্ঠানগুলির মাধ্যমে নেওয়া প্রয়োজন, কিংবা সরকারি বেসরকারি প্রকল্প [Project)-এর মাধ্যমে প্রাকৃতিক, সামাজিক, রাজনৈতিক অবস্থা ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতি খতিয়ে দেখা প্রয়োজন এবং যে কোনো বিজ্ঞানভিক্তিক পল্লীতির মাধ্যমে দুর্যোগের মাত্রা বা Zonation এর মানচিত্র তৈরী করা দরকার। A
b] বিপন্নতার মূল্যায়ন | Vulnerability Assessment) : বিপর্যস্ত অঞ্চলের দুর্যোগ ও বিপর্যয়ের মোকাবিলার জন্য স্থানীয় মানুষ, ক্লাব, NGO, সরকারি, বে-সরকারি সংগঠন কতটা প্রস্তুত তা জানার জন্য নিয়মিত মিটিং বা সভা করা, Check list এর মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করা প্রয়োজন এবং এবিষয়ে মানচিত্র প্রস্তুত করা যাকে বলা হয় Vulnerability mapping.
[c] ঝুঁকির মূল্যায়ন [Risk Assessment] : এখানে ঝুঁকি বলতে সাধারণভাবে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বা মাত্রাকে বোঝানো হয়। বিপর্যয়ে ক্ষয়ক্ষতির সম্ভাবনা কতটা তা বের করতে হবে এবং ঝুঁকির সমীকরণ-এর R = HxV). এখানে R = Risk (ঝুঁকি), H = Hazard (দুর্যোগ), V
Vulnerability (বিপন্নতা), C = Capacity (ক্ষয়ক্ষতি কমানোর জন্য কতটা প্রস্তুত বা ক্ষমতা আছে) মাধ্যমে উক্ত অঞ্চলের ঝুঁকির
প্রকৃত মূল্যায়ন করে তার Zonation মানচিত্র তৈরি করা প্রয়োজন। অর্থাৎ কোনো নির্দিষ্ট অঞ্চলে কি কি ধরনের ঝুঁকির প্রবণতা আছে তার সম্ভাব্য কারণ, প্রতিকারের উপায় প্রভৃতির মূল্যায়ন করা অত্যন্ত জরুরি। প্রতিটি বিপর্যয়ের ধরন, ক্ষতির পরিমাণ সবার সমান নয়। এজন্য প্রত্যেকটি বিপর্যয় সম্পর্কে সঠিক ধারণা থাকা প্রয়োজন, যার উপর ভিত্তি করে যে-কোনো ঝুঁকির মূল্যায়ন করা সম্ভব। অবশ্য ভৌগোলিক অবস্থানের উপর ঝুঁকির মাত্রা অনেকটা নির্ভরশীল।
[d] পূর্বাভাস বা সতর্কীকরণ | Prediction/Warning System ] : দুর্যোগ এবং বিপর্যয়ের পূর্বাভাস বা সতর্কীকরণের জন্য সরকারি এবং বে-সরকারি উদ্যোগে রেডিও, টেলিভিশন, Wireless network- এর মাধ্যমে উপকূলবর্তী অঞ্চল, পাহাড়ী অঞ্চল, প্রত্যন্ত বিচ্ছিন্ন অঞ্চলে খবর পাঠানোর ব্যবস্থা করা দরকার। সব ধরনের বিপর্যয়ের পূর্বাভাস বা সতর্কীকরণ করা সম্ভব না হলেও ভবিষ্যতে হয়তো সম্ভব হবে। পূর্বাভাস এমন একটি বিষয় যা সঠিক সময়ে, সঠিক স্থানে এবং সঠিকভাবে জানাতে পারলে ক্ষতির পরিমাণ অনেকাংশে কমানো যায়।
[e] পরিকাঠামোগত উন্নয়ন [Infrastructural Devel- opment] : দুর্যোগ ও বিপর্যয়ের প্রস্তুতি পর্বে সাধারণ মানুষের ভূমিকার সঙ্গে সঙ্গে সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগত প্রস্তুতির ভূমিকাও যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। পেশাদারি প্রতিষ্ঠান যেমন—আবহাওয়া দপ্তর, সেচ দপ্তর, পরিবহণ দপ্তর, পূর্তদপ্তর, দমকল বিভাগ, পুলিশবাহিনী, সেনাবাহিনী, স্বাস্থ্য দপ্তর, অসামরিক প্রতিরক্ষা দপ্তর, বিজ্ঞান ও কারিগরী দপ্তর ও সংশ্লিষ্ট অন্যান্য দপ্তরের মধ্যে সমন্বয় সাধনের মাধ্যমে দুর্যোগ ও বিপর্যয় এলাকাতে বিপর্যয় সংক্রান্ত অনেক কাজই দ্রুততার সঙ্গে করা যায়। [1]
জনশিক্ষা, পরিবেশ শিক্ষা এবং বিভিন্ন প্রশিক্ষণ
f)Public education, environmental education and training] : দুর্যোগ ও বিপর্যয় মোকাবিলার জন্য সমাজের প্রতিটি স্তরে মানুষের মধ্যে সমাজ সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং দুর্যোগ ও বিপর্যয় মোকাবিলায় তাদের দায়িত্বশীল করা অত্যন্ত জরুরী। এজন্য জাতি, ধর্ম, বর্ণ, লিঙ্গ ভুলে বাচ্চা থেকে বৃদ্ধ, শিক্ষিত থেকে অশিক্ষিত সবার জন্য দুর্যোগ সম্পর্কে ধারণা, সাধারণ জ্ঞান, দুর্যোগ মোকাবিলার প্রশিক্ষণ, পরিবেশ সম্পর্কে সাধারণ জ্ঞান প্রভৃতি বিনামূল্যে দেওয়া আবশ্যিক।
• B দুর্যোগ ও বিপর্যয় চলাকালীন ব্যবস্থাপনা | Measures during hazard and disaster] :
[a] উদ্ধারকার্য [Rescue] : দুর্যোগ কবলিত মানুষদের উদ্ধার করতে সরকারি বেসরকারি সর্বস্তরের মানুষদের উদ্ধার কার্যে সামিল করা দরকার। ঝুঁকিবহুল কার্যে দমকলবাহিনী, মিলিটারী, পুলিশ প্রভৃতি মোতায়েন করতে হবে।
[b] ত্রাণ সামগ্রী পাঠানো | Relief] : দুর্যোগ কবলিত এলাকায় যত দ্রুত সম্ভব সব ধরনের ত্রাণ পাঠানো দরকার, পানীয় জল, খাবার, ওষুধ, ত্রিপল, রান্না করা খাবার, পোশাক, শিশুদের জন্য দুধ প্রভৃতি।
[C] দুর্যোগ ও বিপর্যয়ের পরবর্তী ব্যবস্থাপনা [Post Disaster Measures]: A [a]
প্রস্তুতিকরণ
বিপর্যয় ব্যবস্থাপনা চক্র
পুনরুদ্ধার
প্রতিক্রিয়া
পুনর্বাসন, পুনর্গঠন [Rehabilitation, Reconstruction] : বিপর্যয় কবলিত ও ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চলের মানুষদের পুনর্বাসনের জন্য সরকারি, বেসরকারি সর্বপ্রকার সহায়তা ও পুনর্গঠন-এর জন্য সর্বপ্রকার উদ্যোগ নেওয়া অত্যন্ত জরুরি। পীড়িত মানুষদের নতুন করে ঘরবাড়ি নির্মাণ, জীবিকা অবলম্বনে সহায়তা প্রদান, সর্বপ্রকার মেরামতি করা আশু প্রয়োজন। এছাড়া উক্ত অঞ্চলের সর্বপ্রকার পরিকাঠামোগত উন্নয়ন যেমন—রাস্তাঘাট নির্মাণ ও মেরামতি, পানীয় জলের ব্যবস্থা, বিদ্যুৎ সরবরাহ এবং জীবিকা নির্বাহের পরিকাঠামো পুনরায় সচল করতে প্রয়োজনীয় সর্বপ্রকার ব্যবস্থা যত দ্রুত যে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করে তা অত্যন্ত প্রশংসনীয়। বিপর্যয় মোকাবিলা ও ব্যবস্থাপনার একটি মডেল নীচে চক্রের মাধ্যমে দেখানো হল যাকে বিপর্যয় ব্যবস্থাপনা বা Disaster Management Cycle বলা হয় । প্রশমন পুনর্নির্মাণ জরুরি অবস্থা
সম্ভব নেওয়া প্রয়োজন। এই বিপর্যয় মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক সংগঠন বিশ্ব ব্যাঙ্ক [World Bank] চিত্র 7.4 : বিপর্যয় মোকাবিলা ও ব্যবস্থাপনা
Comments
Post a Comment