সাঁওতাল বিদ্রোহের (১৮৫৫-৫৬ খ্রি.) প্রধান কারণগুলি কী কী ছিল? এই বিদ্রোহের তাৎপর্য বিশ্লেষণ করো madhymik history suggestions madhymik history
Q)সাঁওতাল বিদ্রোহের (১৮৫৫-৫৬ খ্রি.) প্রধান কারণগুলি কী কী ছিল? এই বিদ্রোহের তাৎপর্য বিশ্লেষণ করো। ৫+৩
Answer)
Introduction : আদিবাসী বিদ্রোহের মধ্যে সর্বাপেক্ষা ব্যাপক ও তাৎপর্যপূর্ণ বিদ্রোহ ছিল ১৮৫৫-৫৬ খ্রিস্টাব্দে সংঘটিত সাঁওতাল বিদ্রোহ।
•সাঁওতাল বিদ্রোহের কারণ গুলি নিম্নে আলোচনা করা হল:
1)রাজস্ব আরোপ : কঠোর পরিশ্রমী সাঁওতালরা রাজমহল, মুর্শিদাবাদ অঞ্চলের জঙ্গল কেটে নতুন কৃষিক্ষেত্র তৈরি করেছিল। তারা এর নাম দেয় ‘দামিন-ই-কোহ’ বা 'পাহাড়ের প্রান্তদেশ'। সরকার ও জমিদারদের হাত এই মুক্ত অঞ্চলে প্রসারিত হয়। ব্রিটিশ সরকার নিযুক্ত জমিদাররা সাঁওতালদের জমির ওপর উচ্চহারে রাজস্ব চাপালে সাঁওতালরা বিপন্ন হয়।
2)অন্যান্য কর : সাঁওতালরা প্রাপ্য মিটিয়ে দিলেও জমিদার ও তাদের পাইকরা পুনরায় জমির জন্য কর দাবি করে। ভূমিরাজস্ব ছাড়াও সাঁওতালদের ওপর বিভিন্ন ধরনের কর চাপানো হয়। পুলিশ জমিদারদের সহায়তা করে। বাঙালি ও বিহারি জমিদার বা দিকু জমিদার সাঁওতালদের নির্মমভাবে শোষণ করে। ।
3)সাঁওতালদের এলাকায় দিকুদের নির্যাতন : সাঁওতালদের এলাকায় বহিরাগত মহাজন, জমিদার, যাদের ‘দিকু’ বলা হত তারা প্রভাব বিস্তার করে। দরিদ্র সাঁওতালরা দিকুদের দ্বারা অত্যাচারিত হয়।
4)মহাজনদের শোষণ : সাঁওতালরা নগদে ভূমিরাজস্ব ও অন্যান্য কর পরিশোধ করতে বাধ্য ছিল। তাই তারা মহাজনদের কাছ থেকে ঋণ নিতে বাধ্য হত। দরিদ্র সাঁওতালরা মহাজনের কাছে ঋণ নিলে ৫০-৫০০ শতাংশ সুদ আদায় করা হত।
5)দোকানদারদের প্রতারণা : দোকানদাররা ভুয়ো বাটখারার ওজনে সাঁওতালদের কাছ থেকে বিভিন্ন দ্রব্য ক্রয় করত।
6)ইউরোপীয় কর্মচারীদের অত্যাচার : ইউরোপীয় সাঁওতালদের জোর করে রেলপথ তৈরির কাজে লাগানো হত এবং অত্যাচার করা হত।
7)খ্রিস্টান মিশনারিদের অত্যাচার : খ্রিস্টান মিশনারিরা সাঁওতালদের ধর্মান্তরিত করার চেষ্টা করত।
8) সাঁওতালদের সংস্কৃতি বিপন্ন : ইংরেজ সরকার সাঁওতালদের নিজস্ব আইন ও বিচার পদ্ধতি বাতিল করে সাঁওতালদের এলাকায় ইংরেজদের জটিল আইন ও বিচারব্যবস্থা প্রবর্তন করে। ইংরেজ সরকারের এই ধরনের কার্যকলাপ ও খ্রিস্টান মিশনারিদের ধর্মীয় কার্যকলাপের ফলে সাঁওতালদের নিজস্ব সংস্কৃতি বিপন্ন হয়েছিল।
9)নীল চাষে বাধ্য করা : ইংরেজরা জোর করে সাঁওতালদের নীল চাষে বাধ্য করত।
10. আদিবাসী নারীদের সম্মানহানি : জমিদার ও মহাজনরা সাঁওতাল নারীদের সম্মানহানি করত।
•• সাঁওতাল বিদ্রোহের তাৎপর্য : সাঁওতাল বিদ্রোহ ব্যর্থ হলেও এর তাৎপর্য ছিল গভীর ও সুদূরপ্রসারী।
1.সাঁওতাল পরগনা গঠন : ইংরেজ সরকার ভাগলপুর ও বীরভূমের কিছু অংশ নিয়ে সাঁওতালদের সংরক্ষিত এলাকা হিসেবে ‘সাঁওতাল পরগনা' গঠন করতে বাধ্য হয়। সরকার এই অঞ্চলে সাঁওতালদের জন্য পৃথক আইনকানুন চালু করে ও নবগঠিত সাঁওতাল পরগনায় অন্যান্য বহিরাগতদের বসবাস নিষিদ্ধ করে দেয়। সর্বোপরি সাঁওতালদের উপজাতি বলে ঘোষণা করে ইংরেজ সরকার অত্যাচারী পুলিশ বাহিনীকে এই অঞ্চল থেকে সরিয়ে দেয় এবং ওই অঞ্চলের শান্তিরক্ষার দায়িত্ব সাঁওতাল গোষ্ঠীপতিদের হাতে তুলে দেয়।
2. নিম্নশ্রেণির গণবিদ্রোহ : অরণ্যে সাঁওতালদের অধিকারকে কেন্দ্র করে সাঁওতাল বিদ্রোহের সূত্রপাত হয়। এরপর নানা কাজে যুক্ত মানুষেরা এই বিদ্রোহে যোগ দেয়। তাই এই বিদ্রোহকে ‘নিম্নশ্রেণির গণবিক্ষোভ' বলা হয়ে থাকে। ঐতিহাসিক রমেশচন্দ্র মজুমদার মনে করেন যে, এই সাঁওতাল বিদ্রোহ ছিল মহাবিদ্রোহসহ পরবর্তী অন্যান্য কৃষক আন্দোলনের অনুপ্রেরণা।
Comments
Post a Comment