Q)ফরাজি আন্দোলনের বিবরণ দাও। এই আন্দোলনের
বৈশিষ্ট্যগুলি উল্লেখ করো। (মান 5+3)
Answer)
ভূমিকা : বাংলার কৃষক আন্দোলনের ইতিহাসে ফরাজি আন্দোলন এক গুরুত্বপূর্ণ স্থান অধিকার করে আছে। উৎপত্তি : ১৮২০ খ্রিস্টাব্দে বাংলাদেশের ফরিদপুরের হাজি শরিয়তউল্লাহ নামে জনৈক মুসলমান ধর্মজ্ঞানী 'ফরাজি' নামে এক ধর্মীয় সম্প্রদায়ের সৃষ্টি করেন। 'ফরাজি' কথাটির অর্থ হল ইসলাম নির্দিষ্ট বাধ্যতামূলক কর্তব্য। শরিয়তউল্লাহ ইসলাম ধর্মের মৌলিক সংস্কার করতে চেয়েছিলেন।
•আদর্শ : শরিয়তউল্লাহ মনে করতেন যে, ব্রিটিশ শাসনাধীনে ভারতবর্ষ ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের বসবাসের অযোগ্য হয়েছে। তিনি ভারতবর্ষকে 'দার-উল-হারব' (বিধর্মীয় দেশ) থেকে দার-উল-ইসলাম' (ইসলামের দেশ)-এ পরিণত করার ডাক দেন। এজন্য তিনি কলমা, রোজা, নামাজ, হজ প্রভৃতির ওপর গুরুত্ব দেওয়ার পাশাপাশি কোরানে নেই এমন সব ক্রিয়াকলাপ, উৎসব-অনুষ্ঠান বর্জনের কথা বলেন। তিনি বলেন যে, আল্লাহ্ ধনসম্পদ বা বংশমর্যাদার ভিত্তিতে ভেদাভেদ মানেন না। সব মানুষই তাঁর কাছে সমান।
•• রাজনৈতিক রূপ:- ধর্মীয় সংস্কারের জন্য ফরাজি আন্দোলনের সূত্রপাত হলেও অল্পদিনের মধ্যেই তা রাজনৈতিক রূপ ধারণ করে। শরিয়তউল্লাহ জমিদার কর্তৃক কৃষক শ্রেণির শোষণের ঘোরতর বিরোধী ছিলেন। তিনি চেয়েছিলেন বাংলাদেশে ইংরেজ শাসনের অবসান ঘটিয়ে পুনরায় মুসলমান শাসন ফিরিয়ে আনতে। শরিয়তউল্লাহর মতবাদে আকৃষ্ট হয়ে কৃষক, তাঁতি, কুলু প্রভৃতি নিম্নশ্রেণির মুসলমানরা তাঁর শিষ্যত্ব গ্রহণ করে। তাঁর ধর্মীয় ও সামাজিক সংস্কারের কর্মসূচি ধনী মুসলমান জমিদার ও মহাজনদের আক্রোশের কারণ হয় এবং তারা নানাভাবে শরিয়তউল্লাহকে বাধা দেয়। অবশ্য এতে শরিয়তউল্লাহর জনপ্রিয়তা অনেক বেড়ে যায়। » দুদু মিঞা ও ফরাজি আন্দোলন : শরিয়তউল্লাহর পর তাঁর পুত্র দুদু মিঞার (আসল নাম মহম্মদ মুহসিনউদ্দিন আহম্মদ) নেতৃত্বে ফরাজি আন্দোলন জমিদারবিরোধী ও নীলকরবিরোধী সংগ্রামী চরিত্রের বৈশিষ্ট্য গ্রহণ করে। দুদু মিঞা ঘোষণা করেন যে, আল্লাহ হলেন জমির মালিক। এই কারণে জমির ওপর খাজনা ধার্য করা ও খাজনা আদায়ের অধিকার জমিদারদের নেই। তাই তিনি কৃষকদের খাজনা প্রদান করতে বারণ করেন এবং সেই সঙ্গে নীলকরদের নির্দেশ অনুযায়ী নীলচাষ করতেও নিষেধ। করেন। ১৮৩৮ থেকে ১৮৪৭ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে তাঁকে বেশ বার গ্রেফতার করা হয়েছিল। ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দে সিপাহি
বিদ্রোহ শুরু হলে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। ১৮৬২ খ্রিস্টাব্দে তাঁর মৃত্যু হয়।
>> নোয়া মিঞার ভূমিকা : দুদু মিঞার পুত্র নোয়া মিঞা (আসল নাম আবদুল গফুর) ধর্মসংস্কার আন্দোলনের দিকে বেশি নজর দিলে আন্দোলন দুর্বল হতে থাকে এবং ধীরে ধীরে সেটি স্তিমিত হয়ে পড়ে। নোয়া মিঞার নেতৃত্বে ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত ফরাজি আন্দোলন চলেছিল। তবে শেষ পর্যন্ত ফরাজিরা এক সংকীর্ণ ধর্মীয় গোষ্ঠীতে পরিণত হয়।
> ফরাজি আন্দোলনের বৈশিষ্ট্য :
1) ইসলামের শুদ্ধিকরণ : ইসলামের শুদ্ধিকরণের লক্ষ্য নিয়ে বাংলায় ফরাজি আন্দোলন শুরু হয়।
2) রাজনৈতিক সংগ্রাম : ফরাজি বিদ্রোহ ধর্মীয় সমস্যা নিয়ে আরম্ভ হলেও শেষ পর্যন্ত রাজনৈতিক সংগ্রামে পরিণত হয়। অত্যাচারী জমিদার ও নীলকরদের বিরুদ্ধে এই আন্দোলন পরিচালিত হতে থাকে।
3)দুদু মিঞার বৈপ্লবিক কার্যকলাপ : ফরাজি বিদ্রোহের প্রধান নায়ক দুদু মিঞার নেতৃত্বে গ্রামাঞ্চলে ‘স্বাধীন সরকার’ গঠন, সেনাবাহিনী গঠন, ‘স্বাধীন বিচারালয়' স্থাপন প্রভৃতি কার্যকলাপের মধ্যে দিয়ে ফরাজি আন্দোলন জনগণের প্রকৃত স্বাধীনতা সংগ্রামকে বৈপ্লবিক রূপদান করেছিল।
4) ব্যাপক বিস্তার : ফরিদপুর ও ঢাকা থেকে বাখরগঞ্জ, কুমিল্লা, ময়মনসিংহ, খুলনা, যশোহর ও দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার ব্যাপক অঞ্চলে ফরাজি আন্দোলন বিস্তৃত হয়। তবে ওয়াহাবি আন্দোলনের মতো ফরাজি আন্দোলনের ব্যাপক বিস্তার ছিল না।
5)সংকীর্ণ ধর্মবোধ : সংকীর্ণ ধর্মবোধ ছিল বাংলার ফরাজি
Comments
Post a Comment